Monday, August 31, 2009

বিয়ে খেলা

বিয়েটা খেলাই মাত্র!

আমার সেদিনের মেয়ে
        বলছে:
‘ফাদাল, বালান্দাই তলো
        তোমাল থঙ্গে
    বিয়ে বিয়ে কেলব

ঐতিহ্য, কর্ম, প্রার্থনা: ধুলো

জহিরুল হাসান বাঁধন, কবিতার গোপন পাঠক
একদিন ধুলো থেকে ধুরান্তরে
    আরও কিছু ধুলো হয়ে
        ধুলোবাড়ি মাথায় করে
    ধুলো আর ধুলো আর ধুলো... আহা মরি-
কেবল ধুলোর গল্প করি:

একদিন ধুলোর বিস্তার দেখে
কত কত মহারথী ছুটে এসেছিল!
কতজন বলেছিল:
    মনুমেন্ট ইতিহাসে
        আমরাও ধুলো হবো...

একদিন হয়তো ধুলো আর ধুলো থাকবে না!
জাদুঘরও রাখবে না একমুঠো ধুলো;
তবু আমরা কজন
    একান্ত ধুলো হয়ে থেকে যাব
        গেরিলা জীবন নিয়ে;
    যার-তার চোখেমুখে
        ঢুকে গিয়ে
দেশে দেশে ধুলোবিহারের বাহার আনিব...

তখন, কেউ কেউ হয়তো সিনেমা করবেন-
            ধুলো কেন সন্ত্রাসী?
ধুলো এত অনুপ্রবেশকারী?
    ধুলো অসহ্য
        পরিস্থিতি বোঝে না,
    ধুলোকে ধর... মার
    ডাক ফায়ার সার্ভিস-
        ব্যাপক পানি ছিটিয়ে দাও

আবার, কেউ কেউ হয়তো বলবেন-
    ধুলোদের পুনর্বাসন চাই!
কিন্তু কোথায়? কোন আশ্রমে?
        ধুলোজন্ম-গৃহত্যাগী
            ভ্রমে... ভ্রমে... ভ্রমে...

কিন্তু আমরা কোথাও না কোথাও
            থেকে গিয়ে ফের
আরও কিছু ধুলো... জন্ম দেবো;
যেহেতু আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ
        গোপনে গোপনে
            যত প্রসিদ্ধ তত স্মরণীয়!
যেহেতু আমার বাবাও ছিলেন ধুলো
    তার বাবা বা
        তার বাবারাও তাই...

হাই! হ্যালো... সাম্প্রতিক আমরা কজন
        ধুলোবোন ধুলোভাই!
যদি জাতিস্মর হয়, ঘরে-ঘরে
        যথাযোগ্য ধুলোজন্ম চাই...

চঞ্চলের রেলগাড়ি, কবিবন্ধুকে বলি

আমাদের রেলগাড়ি, স্টেশনবিমুখ
আমাদের শুভযাত্রা ‘এক দুই... জিরো’
আমাদের নদীকেন্দ্রে ভীষণ অসুখ
আমাদের হীনদিন, কী মলিন চির...

আমাদের পদ্মভাষা ধুলোবালি... ধুলো
আমাদের পিপাসা তো নিহত কবেই,
আমাদের গৃহবাস শিখিয়েছে তুলো
আমাদের নিশিলিপি দীর্ঘ হবেই...

আমাদের মধ্যমাঠ কী ভীষণ ফাঁকা
আমাদের জ্যামিতিতে এত বেশি কোণ!
আমাদের ঘরবাড়ি মেঘে মেঘে আঁকা
আমাদের দেয়ালটা পরে অ্যাপ্রোন...

আমাদের কাঁশবনে এত ভ্রম, নারী?
আমাদের পোড়া প্রেম, যেখানে যা পাই;
আমাদের ছোটপ্রাণে অরের সারি
প্রতিদিন মিডিয়াতে নামটা ছাপায়

তাতেই তুমোল ধারা, ভারা ভারা রাশি
সশরীরে শিরোনাম এত ভালোবাসি?

Saturday, August 29, 2009

ক্রান্তিকাল

মাঠে মাঠে এত গান, রাগমিশ্র হাওয়া,
            এত হাহাকার?
যদি কিছু শুনতে পাই
        কিছু তো পাইনে তার!

সলজ্জ স্বীকার করছি, শ্রবণের দোষে
        আমি কিছু সুরশ্রীকাতর;

আর তুমি সান্ধ্যগ্রাম, ত্রস্তমেঘ, মৌনভঙ্গে যথা মাধুকরী
অবলীলায়, স্নাতক হয়েছে সঙ্গীতে...

সেহেতু আলাপ হলো
    অবশ্যই অভিলাষ হলো-
        গৃহে গৃহে
            অতিরঞ্জনের নামে
এ-কথা সে-কথা, শেষে
        কাহিনী ছড়াল!

শুধু
    স্রোত এত বেশি বলে
        পারে পারে
            সাঁকোই হলো না!
ও মেট্রোপলিটন মন ও ব্যষ্টি বিভাজন...

একটি মিথ্যে কবিতা

লালন ফকির আসলে মিথ্যে, ঘুরে বেড়ায় তীত্থে তীত্থে
মিথ্যে রাত্রি, মিথ্যে ডানা, মিথ্যে ওড়াউড়ি
মিথ্যে আমার সরলতা, মিথ্যে লুকোচুরি

মিথ্যে আমার নিরবতা, মিথ্যে কথা বলা
মিথ্যে গল্প, মিথ্যে মধুর, মিথ্যে শকুন্তলা

মিথ্যে আমার নিঃসঙ্গতা, মিথ্যে লেখালেখি
মিথ্যে আঁকা মিথ্যে শস্য, সমস্ত মাঠ দেখি

মিথ্যে স্বপ্ন, মিথ্যে মগ্ন, মিথ্যে মাদকতা
মিথ্যে কিন্তু একধরনের মিথ্যে সফলতা

গুরু মিথ্যে, লঘু মিথ্যে, মিথ্যে সাধারণ
মিথ্যে ছিল, থেকেও যাবে, মিথ্যে আমার মন

আজ মিথ্যে, কাল মিথ্যে, পরশু মিথ্যে দিন
মিথ্যে মিথ্যে জড়িয়ে থাকে মিথ্যে কিছু ঋণ

মিথ্যে কাগজ, ছাপানো বই, মিথ্যে মিথ্যে দেখা
যা শিখেছি, যা লিখেছি, মিথ্যে যত লেখা...

প্রত্যাবর্তন

যেন সব কথা শেষে আবারও বলছি, শোন-
বন থেকে উঠে এলে বনসাই, এই প্রকরণও

পরিচিত লাগে; কেন না মর্মরে ওড়ে গৃহভূমি!
আমি যে বাক্যের পুত্র, তার কন্যা একমাত্র তুমি

বহুদিন বেড়ে ওঠো, পূর্বাপর বাঁধের ওপারে
সব কথা রুগ্নপ্রায়, পরম্পরা... বহু ব্যবহারে

যেন বা বলেছি এক নদী থাকে, তার দুই তীরে
থাকে দুরকম জখমের চিহ্ন- ভাবের গভীরে
থাকে বিভাজন বয়ে যাওয়া দ্ব্যর্থ-ব্যর্থ ঢেউজল
যেন বা বলেছি, মৃত্যু ঘিরে থাকে অমৃতের দল

আবারও বলছি, শোন- আমি জাহাজ পুড়িয়ে শেষে
এই যে এসেছি, কাহিনীর মতো... কাহিনীরই দেশে
আমার সঙ্গে এসেছে সেই প্রাক-পুরাণিক পাখি!
আমি সেই পাখিটিরে ‘তুমি’ বলে তপোবনে ডাকি...

ফলে, ঘরে বনসাই, ঘরখানি উড়ে যায়! উড়ে
সমস্ত কথাই আসে, বহুপথ, বহুকাল ঘুরে

Friday, August 28, 2009

বলা না বলা

যা-ই বলি না কেন, আমাদের কথাজন্ম কাঙ্ক্ষিত
তীরের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছে নদীও নির্বাক হয়!
ফলে, আমরা যা বলতে চেয়েছি- বলাই হয়নি
এতকাল ধরে বলেও! ওপারে পৌঁছেনি প্রতিস্বর...

একে ব্যাখ্যা দিতে যদি কোনও রমণীর কথা বলি-
দেখবো, আপেল বনের নামে ওপারের সচিত্র
ফলময়ী রূপগন্ধ এপারের তীরে এসে দোলে!
ফলে, কথামৃত কঙ্কালের অভিব্যক্তিই মরে যায়...

ফের ব্যাখ্যা দিতে যদি এক বালকের ব্যথা লিখি-
দেখবো, অনেক পুরনো চিঠির ভাঁজে ভাঁজে ছেঁড়া;
ছেঁড়া তো নৌকার পাল- তবু তাতে হাওয়া এসে লাগে
এদিকে পুরনো পত্রে আমাদের প্রেম যায় ছিঁড়ে

ফলে, আমাদের কথাজন্ম যথার্থ ব্যর্থ বলেই
আমি যা যা বলতে চাই- বলাই হয় না... অবলান্ত

শিশুগাথা

সেই সিংহাসন, যাকে ঘিরে শিশু আজও
            পুতুল সম্রাট...

ফলে তার তো আর ক্ষমতা থাকে না।
ফলে, তার দৈর্ঘ-প্রস্থও যায় কমে...

এই হচ্ছে রাজ্যপাট, নিষ্ঠ-ইতিহাস, যে
নারীর সমীপে আজও
        জাদুময় রূপান্তর থাকে,
থাকে আমাদের কান্না-ক্রোধ-ব্রীড়া মৃত্যু
            দীর্ঘ শিশুকাল...
কারণ আমি পুরুষালী কাতরতা দেখাতে গিয়েই
যেন এক শিশু হয়ে ফিরেছি আজও... ফিরছি

বটে! হাত সাক্ষী আমার
অবিন্যাস্ত আত্মক্রোধে পেপারকাটিংই বউ!

এই যে আমার স্বীকারোক্তি, এতে
নিশ্চয়ই খুব লজ্জা মূখ্য নয়?

টানাপড়েন

বিভা-কে
এই যে পাহাড় ছুঁয়ে বসি-
        এটা এত উঁচূ উঁচূ?
        তবু এরা নিকটস্থ...
            ভাই ভাই!
আমি এই পাহাড়ের সঙ্গে একদিন
        সম্পর্কে জড়াই...

এরই মধ্যে উড়ে উড়ে বয়েসি মরাল
স্বগত বলেছে: ছিল নিরানব্বই সাল

দূর থেকে মনে হওয়া কালো কালো গ্রাম
ওই ঢিবি-সভ্যতার ঢিলিমিলি;
    সে রাতে অজ্ঞাত ভেবে
        আমাকে ফিরিয়ে দিলি?

স্মৃতিপৃষ্ঠা থেকে

কবি মারুফ রায়হান শ্রদ্ধাস্পদেষু
খুব বিকেলের ভাঙাবাড়ি
        খুব কবেকার কথা!

আলপথে শুয়ে ছিল সাপ
    তার
        নিদ্রিত ফণার নিচে
        শীতল পঙতির আড়ালে
ছিলাম মাঠের গ্রন্থ
মুদ্রণ অযোগ্য মনোলগ!
    ও ইতিহাস পাখি
একটু পরেই বিগ্রহ
    ভাঙাবাড়ি, চাপাকথা
        বরেণ্য বিকেল...

আজ গ্রহণের দিন
    আজ অন্যমনস্ক ধুলোর বিস্তার!
আজ আকাশ, খড়ের অস্তিত্ব, ধূসরতা, অভিমান-
        সব গ্রন্থিত হ’ল যদি
তাকে লিখিত লাবণ্য দাও
    ও লুব্ধ
        হত-বসবাস...

আমি সব আমিদের

যে কোনও পরিধি ছিঁড়ে যে পরিধি গড়ি
তাতে কিছু ঢেউ শুধু ভাঙে জলঘড়ি!
যে কোনও পথের বাঁকে কিছু খাদ থাকে
আমার লিখিত হাতে, দেখি শাদা ছড়ি

তাকে বলি পাঁজরের দীর্ঘ এক হাড়
যেভাবে আমার মৃত্যু, গোপনীয় থাকে;
আমি কোনও লাশ হয়ে কবরের ঢিবি
মাটিতে আমার লেখা- এ লেখা কে নিবি?

এদিকে পুরনো কোঠা, ওদিকে তো ফ্লাট
আমারও পাওনা ছিল... মৃগয়ার মাঠ;
যদিও প্রচুর ফণা তুলেছে কুসুম
যদিও বন্ধ ছিল গৃহের কবাট

যে কোনও পরিধি ছিঁড়ে... লেখা যে লাইন
তার অর্থ ঝরাপাতা, উড়ে যাওয়া দিন
জলঘড়ি ভাঙারূপ: আমি ভেঙে ভেঙে
শাদা ছড়ি শাদা হাড়, থাকি সিজোফ্রেনে

ফলে, লেখা... লাশ... ঢিবি... মাটিময় আশা
আমারও কলমে ছিল পাললিক ভাষা

কিছু যা লিখেছি মেঘ, তারা পরাজিত
যত আমি সিংহাসনে, তত আমি মৃত;
যেন ভাঙা প্রাসাদের ক্ষত যেই দিকে
আমি সব ‘আমিদের কথা’ যাই লিখে

দেবী চতুর্দশপদী

আজ ভোরে একদল জলপাখি যেভাবে এসেছে
সারামাঠে ছড়িয়েছে নির্বাচিত প্রেমের কবিতা!
এত এত লেখালেখি, সে লেখারা নিজেই ফেঁসেছে-
কার কাছে? যিনি কিছুই দেন না... শুধু গ্রহীতা!

গ্রহণের সাধ হলে, তিনি কিছু পাথর পাঠান;
আমিও ছোট্টলেখক, যেই নাম লিখতে যাব-
অমনি পাথর পাখি হয়ে যায় উড়ে... উড়োযান!
তখন কি আর বুঝতে পেরেছি নামটাই হারাব?

একজন পাঠিকা লিখেছে, ‘তুমি কিসের ঠাকুর?’
না, কোনও জবাব নেই! নামহীন পরে গোত্রহীন
সময় পেরিয়ে যায় এক প্রান্তাকর্ষে, বহুদূর...
আমাকে হঠাৎ দেখি মাঠের মধ্যে! মাঠটি প্রাচীন

সেই মাঠে ফুটিতেছে নির্বাচিত প্রেমের কবিতা
যিনি, তাকে আর কখনো কি বলা যাবে ডাহা গ্রহীতা?

পুনশ্চ

শুয়ে আছে, শুয়ে তো আছেই উড়ন্তধুলো
এবঙ উড়ছে উত্তরাধুনিক স্থাপত্যগুলো...

বহুদূর ভ্রমণে সাক্ষাৎ ধুলোর সঙ্গে, তবে
শব্দের পরে শব্দ সাজিয়ে স্থাপত্য হবে

হবে মানে? হয়ই তো, হয়েছেও প্রচুর
বহুদিন পরে আজি পেয়েছি দুপুর
তারই কিছু রৌদ্রকণা পরিচিত লাগে
যেন মৃত পথ আজও জাতিস্মরে জাগে...

একি সম্ভব? এই অসমভাবের দেশে
আবারও উন্মাদ হবো, ভালো-মন্দবেসে?

আমার জীবনী: একটি দীর্ঘ কবিতা

অবশিষ্ট এই সন্ধ্যা... অধিরূঢ়... শ্রীস্নিগ্ধ সঙ্গীত
আর এই ঝাপসা-নৈঃশব্দ থেকে তুলে আনা দৃশ্যে
দূরে কোনও দগ্ধমিশ্র... ঝিঁঝিঁরূপ স্বরলিপি ধরে
আমার জীবনী ভেসে যায় বাঁশবাগানের দিকে