Monday, September 14, 2009

আয়ুর সিংহাসন

টোকন ঠাকুর
প্রথম প্রকাশ
ফেব্রুয়ারি শেষ সপ্তাহ, ২০০০
প্রকাশক
দেশ প্রকাশন
৪০ আজিজ সুপার মার্কেট
শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
© জাহানারা বেগম বুড়ি
প্রচ্ছদ
শিশির ভট্টাচার্য
মুদ্রণ
প্যারাগ্রাফ
১৩ নয়া পল্টন, ঢাকা-১০০০
ফোন: ৯৩৪৬০৭৮
কম্পোজ
দেশ প্রকাশন, ঢাকা
মূল্য: ৪৫ টাকা



ISBN: 984-8182-28-5

Ayur Shinghashan By Tokon Thaakoor, Published By Desh Prokashon, 40 Aziz Super Market, Shahbag, Dhaka-1000, Bangladesh
Price: Tk 45.00 Only

যিনি কবি; জাহিদ হায়দার
যিনি ছবি; ধ্রুব এষ

তখন ১৯৯৬ সাল
আমার চাকরি হয় না!

আর যখন ২০০০ সাল
আমার আবার চাকরি হয় না!!

‘তোমার শুধু কবিতা লেখাই চাকরি
টাকা হলে বেতন দেব’- ধ্রুবদা কথা দিলেন চারবছর আগে;

‘আপনার শুধু কবিতা লেখাই চাকরি
টাকা থাকলে বেতন দিতাম’- জাহিদ ভাইও তাই বললেন;

কিন্তু আমি যা লিখি, তাতে আমার বেতন হয় না
যতই তারা মুগ্ধবৎ যত সত্যি বলেন!

মিলেনিয়াম পোয়েট্রি

আমরা কিন্তু তারাই!

যারা কখনও তিতির নাকি বনহংস
প্রতর্কিত পাখিবংশ...
        অতিরিক্ত উড়তে গিয়েই
            মেঘের মধ্যে হারাই

যারা কখনও বাঁধের উপর বিকেল হয়ে দাঁড়াই!
লেখাপৃষ্ঠার পাশেই শুয়ে
    মাইল মাইল ঘুমিয়ে পড়ি, যারাই-

একদিন তো আর পারি না... আর কাউকে পারাই
কতজন্ম... মৃত্যু লিখে
    আমরা কিন্তু তারাই... যারা
        এই জন্ম প্রাতিস্বিকে
রূপমাধুরী লিখতে গিয়েই
        এক-এক দলে হারাই...

যখন আত্মখুনের মুগ্ধতোরণ
        পাড়ায় পাড়ায় পাড়ায়

আমাদের প্রতিবেশী ধুধুসম্প্রদায়

আমাদের প্রতিবেশী ধুধুসম্প্রদায়
ওদের বাড়িতে বিয়ে! কে কে যাবি আয়...

কি হলো কাঁদছ কেন? -ধুধুদের মেয়ে!
আমরা অতিথিমাত্র, সবে বনসাই-

ফলে, ঘর ছেড়ে একদিন, বাইরে... দূরে
তোমাকে দেখতে যাব, মাঠতক জুড়ে
তুমি কিভাবে সংসার কর, কিভাবে
দৃশ্যাতীত হও, ডানা ঝাপটাও ঘুরে;

সে মৃদু রহস্যরীতি, কেউ কেউ জানে
ধুধুদের জন্ম হয় গৃহত্যাগী গানে!
আমরা সামান্যশ্রোতা, তাতেই ভাবুক
মাঠের শিয়রে যাই- মর্ম সম্প্রদানে

ফলে, ধুধুবউ আজ- পরস্ত্রী-কবিতা
তুমি... লুব্ধ! তুমি সেই শাস্ত্রহীন চিতা;
এ পাড়ায় পুড়িয়েছ সবুজের বন-
যে কারণে পাঠ্য হলো রাধা-সংহিতা?

হোক না, তাতে কি, আমি বেশ যাই
ওইখানে... প্রতিবেশী ধুধুসম্প্রদায়

সম্পর্ক সম্পর্কে

সম্পর্ক নির্ণয়ে এসে, যদি বল
        তুমি কেউ নও

যেন তুমি দীর্ঘ এক ফাঁকা মাঠে কখনও হাঁটনি?
তুলোতে রক্তের রহস্য নিয়ে, যেন তুমি কিছুই ভাবনি?

কোনও কোনও রাতে খুব রীতিভঙ্গ ঘটে!
            আর আমার
                ঘুমই হয় না...

শেষমেষ দেখেছি, সম্পর্ক একদিন
    বিশেষণ থেকে সরে এসে
        বিশেষ্যে দাঁড়িয়ে যায়!
ফলে সে নিজেকে ভাঙে, ভেঙে দু’টুকরো হলে
একটুকরো তুমি নিয়ে যত লাভ কর,
অন্য টুকরো আমার তেমন কাজেই আসে না...

তবে একদিন, আমাদের সম্পর্ক নিয়ে পাখি এত হেসেছিল
একজন, মানে মুজিব মেহদী তো কবিতাই লিখে ফেলেছিল

সম্পর্কের ভাঙা টুকরো
        তুমি আমায় ঘুম পাড়িয়ে দেবে?

কবিতীর্থের কাক

আমাদের ধারণাই ছিল না পথিমধ্যে এত ভাব পেয়ে যাব!
এত ভাব সঞ্চারিত হবে আমাদের গুপ্ত ঠিকানায়!
তা অবশ্য ভাবতেই ভালো লাগছে...

আমরা যখন দেরিদা পড়ছি, গঁদার দেখছি
শুনছি একটা পুরনো নদীর বনেদি আলাপ
        সাংস্কৃতিক মনস্তাপ, ও
রুটস্-এ ফেরার তর্কদূষণ করতে করতে
            ছুটে যাচ্ছি
                যেদিক যখন
পথের মধ্যে বাঙলামটর: সাহিত্যকেন্দ্রের গলি...
ভাব এসেছে ভাব এসেছে
        ভাবের কথা বলি-

আমরা ভীষণ অভাব নিয়ে, থেকে যাচ্ছি বেঁকে যাচ্ছি
            খুব অভাবের পাশে,
‘সমস্ত দিনের শেষে’ জী হ্যাঁ, শাহবাগ ঘুরেফিরে আসে!

আরও আসে রাশি রাশি ভাব!
    ভাব আসে আমাদের গুপ্ত ঠিকানায়...
যা অবশ্য ভাবতেই ভালো লাগে

গুপ্তগৃহে লুপ্তপ্রায়
    বংশকারিগর-
        আমাদেরই পরিবেদনায়;
ভীষণ অভাবেও আমরা
    সন্ধ্যাতারা... তুলোবীজ
        কবিতা বানাই...

Saturday, September 12, 2009

কবির ঘরে কে রে?


ঘুম আসছে? আসছে না ঘুম
পাপবিদ্ধ রুগ্ণকুসুম!

তুলোবীজ না তুলো ওড়ে?
...পুড়ে কয়লা, কয়লা পোড়ে...

কয়লা মানে পোড়া শব্দ
বয়ে বেড়াচ্ছি অব্দ অব্দ

নিঃশব্দ বিলীন মাঠে
ওই যে রেখা অন্তে হাঁটে

হাঁটতে হাঁটতে হস্তিনাপুর
তারপরেই তো রূপসমুদ্দুর...

রূপসমুদ্দুর শ্রীজল জলে
ঢেউয়ের নৌকা ঢেউয়েই চলে

ঢেউ চলে যায় সনির্বন্ধে
ঘুম উত্থাপন রাত্রিসংঘে

রাত্রিসংঘ বিদ্ধ পাপে
মহৎ মহৎ মনস্তাপে!

মনস্তাপেও দ্বিধাদ্বন্দ
শব্দপোড়া পোড়া গন্ধ

পুড়ছি বটে- পুড়ছে ঠিকই
মাঠের উপর পঙক্তি লিখি

পঙক্তিগুলো সজ্ঞানে ভুল
রিয়েল সুগার পবন বাউল

মনপবনের ওমসিদ্ধ
রুগ্ণকুসুম পাপবিদ্ধ?

যেহেতু পাপেই কবিতাজন্ম
কবিও ভীষণ হীনম্মন্য

যেমন তুলোয় রক্ত দেখা-
পাপ নয় কি দেখেই লেখা?

সেই রক্ত তুলোয় মিশে
কোন কবিতা ঝরে উনিশে?

কোন কবিতা বিয়ের পরেও
গোপনে যায় অন্যঘরে?

অন্যঘরেই কবির খাতা
খুব নিঃসঙ্গ বিছানা পাতা;

তাতেই পতন, পতন কি কি?
মাঠের পরে মাঠকে লিখি...

লিখি... রুগ্ণকুসুম ঝরে
কবি নিঃসঙ্গ? আর কে ঘরে?

Friday, September 11, 2009

জলছত্র

জলের যেসব শর্ত প্রচারিত আর যারা যারা
করে আর্দ্র-আলাপন; তাদের নিকটে গিয়ে বলি:
আমাদের মরুবাক্য ভালোবাসে জলের পাহারা
বালুচরে, কেননা ধর্মেই আছে মৃত্যু... অন্তর্জলি

ফলে বাঙলা কবিতা, যারা তাতে চাহে সম্প্রচার
যারা তাতে লিখে রাখে অহেতুক বৃষ্টি-ব্যবহার
যারা তাতে বহু নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়, জান?
তাদের ভ্রমণ মানেই- কাগজের নৌকা ভাসানো...

অবশ্য জলের গল্প, উঠোনেও আঁকা যায় জেনে
আমাকে ভিজিয়ে ফ্যালে বর্ষা, ঘর থেকে ডেকে এনে!

দূরে চক্রজন্ম-মেঘ, দূরে আমাদের আলাপন
যেভাবে যন্ত্রস্থ হয়, অতিরিক্ত অন্ধকার... ক্ষয়
যত করি জীবাশ্মের গান, যত মূর্খ আয়োজন
ও পিপাসার ভাষা- জলে থাকে তার যথার্থ প্রশ্রয়?

ফলে, সেসব উপমা প্রবারিত, আমি ছুঁলে খরা;
স্ত্রী-মাছের স্বপ্ন, যদি মিথিক্যাল... অধরা অধরা

তবু ধরতে চেয়েছি, মরতে চেয়েছি, বহুবার
যারা বাক্যে অহেতুক, করি কীনা বৃষ্টি-ব্যবহার...

যেহেতু আবর্ত আছে, ঘুরে ঘুরে যত দেবী আসে,
আমরা পাহারা দিই... জল তার চরিত্র বিকাশে

ছোটকাগজের পাখি

সাদি: ও গোল্ডফিশ, নদীমৃত বর্ষা এল দেশে
ছোটকাগজের পাখি, দগ্ধ উপবন!
ওপাশে পাহাড় নাকি কুয়াশাভবন?

গভীর জলের কাছে, অন্ধ দুটি চোখ
যারা কেউ হারিয়েছে ফেরার সড়ক-

এই নীপবনে, বর্ষাযুক্ত যন্ত্রণায়!
আমার সামান্য গান- তাদেরে শোনাই...

শোন, যেভাবে শরীর ধর্মহীন হয়,
হলে যে পোশাক পড়ি, তা তো পরাজয়...

তা তো মেনে নিতে নিতেই, এতটা পতন,
এতটা বিলুপ্তি! এত দগ্ধ উপবন

আপেল গাছের নিচে, যারা খুব ঋণী,
ব্যর্থতার শ্রেণীমন্ত্রে তোমাদেরও চিনি

সতীর্থ; গিয়েছ দূরে... যেইমর্ম থেকে
গমক্ষেতে অবশিষ্ট কাকগুলি এঁকে

মাঠের শিয়রে সেই বদ্ধ... হেসে উঠে!
সেইখানে আজও ক্ষত, রক্তফুল ফোটে...

কেননা ফুলের দেশে, গন্ধমৃত থাকি!
এই শহরেই, ছোটকাগজের পাখি-

উড়তে উড়তে, তার লিখিত পালকে
জল দেখে স্মৃত কেউ, অন্ধ দুটি চোখে...

ফলে, বিস্মৃত নদীকে আজ, ফের লিখি
ড্রেনে ড্রেনে! শাহবাগে নবীন বাল্মীকি

যদি বলে ব্যাধ নেই, সে কথা মানিনে।
যদিও মায়াবী মৃত্যু, মুদ্রা দিয়ে কিনে

ঘরে ফেরা যায়! কিন্তু ঘরের ধারণা
ভেঙে, যারা সড়কেই খোঁজে সম্ভাবনা?

দেখে দেখে, যদিও বা অন্ধ দুটি চোখ!
যদিওবা লুপ্ত আজ ফেড়াড় সড়ক

শোন, আমি ধর্মহীন এই যে শরীরে
ফিরে যাই অফুরন্ত গাগনিক তীরে;

ফেরে বর্ষা, মাছমন, নদীগুলো মৃত
ছোটকাগজের পাখি আমি... পরাজিত?

ঘটনাসঙ্কুল

সব কিন্তু আমি নই! সবাই
    থাকছে সবার মতন, একা
একটি মোরগ- কে এল তাই জবাই
হলে, ছুরি ব্যবহার শেখা...

বসন্ত আগে, একবারই
    আমি এক ফুল হতে গিয়ে
ধরা পড়ে যাই! আজও তারই
    পাপ, চলি কুড়িয়ে কুড়িয়ে...

পথ কিন্তু পান্থ নয়! যারাই
    জেনেছে তার বেড়েছে ক্ষত!
যখনই স্তব্ধ ভেঙে, দাঁড়াই
    দেখি: তীর শত শত

কখনও কখনও নীল, নীল নয়
    বহুধাবিলীনের ছবি,
কাকগোত্রে কবে পেয়েছি প্রশ্রয়
    আমি কাকস্য কা... কা কবি

বাল্যবন্ধুর শখআহাদ

ধুলো নিয়ে কাব্য করি, কতপ্রকার ধুলো আছে দেশে?
কতপ্রকার দেশ আছে চেনাজানা কত নদীপাড়ে?
আমাদের বাল্যবন্ধু, তার খুব শখ হলো শেষে
একমুঠো ধুলোকেই বউ ভেবে যাবে সংসারে...

তারখুব স্বপ্ন হলো- ছেলে মেয়ে সব ধুলো হবে
একদিন ধুলো থেকে ধুলো কোনও সম্প্রদায় হবে!

ধুলোদের একটি ছেলে, একদিন ধুধু সম্প্রদায়ে
উধাও... মাঠের দিকে, নিশিবনে... কে না বাঁশি বাএ-
ধুধুদের মেয়েটি উধাও... এবার-উধাও সম্প্রদায়
তাহলে উধাও হতে, একমুঠো ধুলোমাত্র চাই?

আমাদের বাল্যবন্ধু, সেও খুব কবিতাপাঠক;
পড়েছে আমার আগের লেখা ধুলোর পঙক্তিমালা!
আমিও লিখছি তাকে, যেন আজ সত্যি হলেও হোক
ধুলোতার বউতার কবেকার পাড়াগাঁর ধুলো...

সংক্রমনযোগ্য

উলুখড় এড়াতে পার না তুমি
        প্রজাপতি দেশলাই...

গন্ধর্বের যেটুকু গরিমা
    গৃহে গৃহে ফেরে গোপন বাসনা
কথা তো কেবলই ধ্বনি!

কবি বললেন- ঝিনুকের মতো যোনি

না হয় বৃরে পাতা ঝরে গেছে
নদীও হয়তো স্তন-শুকানো বুড়ি

তবু, আকাশে উড়ছে পরম্পরা
        উচ্চ মাধ্যমিক চাঁদ;
পুড়তে পুড়তে পেতে চাই আহাদ...

তাছাড়া আঙুলে সিগ্রেট আছে
উলুখড়ে শুয়ে রয়েছি কাছেই
    অতএব তুমি এড়াতে পার না
        আগুনের বাণী
        প্রজাপতি দেশলাই...

শৈলকূপার কবিরা

...শর্মাচার্য, আল হাফিজ... মুহম্মদ রফিক-কে
শৈলকূপার কবিরা আজও ধূলি-গোতে গিয়ে আলাপ তৈরি করে

আলাপে বিশদ হয় বন! তখন বনের মধ্যে একটি-দুটি বাঘ
এমন ‘হালুম’ করে যে, সুনীল পালাতে গিয়ে, সেই মাঠে
যেন রাখাল হারিয়ে যায় (সত্যি বাঘ এসেছিল?)

আলাপে প্রসীদ হয় দুঃখ! আলাপে অংশ নেয় শৈলবালা?
আলাপে বিষাদ হয় মন, আসলে মনের মধ্যে বাঘ
            বাঘটি কখন এসেছিল?
        সুনীল কেন, বিজুলিয়ার মাঠও জানে ছাই...
আমরা বরঙ রাজার কাছে যাই!
রাজা সলোমন! এবছর বাইবেল কত কপি বিক্রি হলো?
লেভি স্ত্রাউসের সঙ্গে কি প্রাচ্য-প্রেম নিয়ে কথা বলা যায়?
অথবা স্নানের তরে, নদী মরে যাওয়াই কি সমস্যা এ অঞ্চলে?

আলাপে পরম সন্ধ্যা; সন্ধ্যায় দাউদ আজও
সন্ত-মন্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন! ভেবেছেন:
আবিশাগ কি আর ফিরবে না শৈলকূপায়?

রণক জানে কি ধুরোরা মহান! দু’পায়...
দু’পায়ে জড়াই ঋণ!

আলাপে অস্মার হয় দিন! বহুদিন পরে
মাঠের সন্তান ওই মধ্যমাঠে
        ম্রিয়মাণ অনুজ ঠাকুর-
আজও যদি ব্যথিত কুমার, জলহীনতায়...
        নীলচাষ লুপ্ত তবু
ভুল করে পেয়ে থাকি নীলাভ প্রশ্রয়?
আলাপে সহস্র প্রশ্ন, শত সংশয়...

দিগ্বালিকা আবিশাগ... শৈলবালা কাকে ভালোবাসে?
শৈলকূপার কবিরা আজও গোধূলি-আলাপ হয়ে ফিরে আসে...

কাগজের লোক

রাজীব নূর-কে দেখেছিলাম মন্টু দাসের বাড়িতে
ভাব, ভুল করে সম্প্রসারিত হলে
ঝরাপাতা- উড়তে উড়তে আমাদের কথাই বলছিল

দুর্মরের চরে, বহু বালিবিন্দু
রোদে বেঁধে আরও বলছিল যে-
        এক গাঁয়ে, নদীর নামটি যন্ত্রণা...

এরই ফাঁকে সুষমার শিশুগুলি দোল খেয়ে দৌড়ে গেল!
এরই মধ্যে মাধুর্যের তিন মেয়ে
        পরপর আমাকেই ভালোবেসে, শেষে
            সম্প্রদান করেছে সেই বিমূর্ত বালিশ!
সূত্র বলে, শিমুলের বিষণ্নতা ফেটে গিয়ে তুলো হয়ে যায়...

অধীনস্ত স্বপ্নগুলি, ভাবো, তোমাদের প্রতিবেশি রাইক্ষেতে
রোপিত ঝিলিক দেখে যদি দগ্ধ হয়
            দূরের দ্রষ্টব্য
এক গাঁয়ে, আমার নাম তো কেউ জানে না (তখন)
ধুধুপৃষ্ঠা সেজেগুজে গুহ্য স্বয়ম্বরা
মর্মরের দেশে, সেই ভাবই ভালোবেসে
        সম্প্রসারিত হলে
শুভ্রমতী জানবে কী
        আমি কাগজের লোক

এরই মধ্যে বহুদিন অভাবে কেটেছে! ফলে
এক ভোরে, ভুল করে
        এ গাঁয়ে এসেছি:
        গায়ের নামটি যন্ত্রণা...

Thursday, September 10, 2009

স্বীকারোক্তি

মৃগাঙ্ক সিংহ, আমার দুর্লভ বন্ধু
এ তো কান্না ছাড়া কিছু নয়!
দূরে ও সুদূরে ছিল
        আবহমানের ঘুঙুর...

তবে, নৌকা হারিয়ে
    এই
        নদীতীরে বসে থাকা,
এরই মধ্যে রৌদ্র এসে
        আদালত বসিয়েছে!
যেহেতু রাত্রির ছিল
        গুপ্ত, নিদ্রাপাঠে
        বহুলাংশে বিভক্ত শিবিরে...

এরই মধ্যে মাধুরীকল্যাণ এসেছিল, নাচতে নাচতে
        ঝালর বাতির নিচে;
এরই মধ্যে সারামাঠ
        মায়াসন্ন্যাসীর
মঠ বানিয়েও আবার মিলিয়ে হাওয়া...

এরই মধ্যে শল্যধর্ম
        শাঁখে ঢাকে
            গানে গানে
শোনা ধ্বনিত-পৃষ্ঠায় লিখে রেখে গ্যাছে
মৃত মুহূর্তের শিলালিপি...

আজ সেই গান করি
    যদি বা কণ্ঠে সাধন-
        এত কান্না প্রকাশিত হয়?
        যেহেতু ব্যথার প্রসঙ্গ নিয়ে
    রয়ে গেছি প্রাপণরহিত দিনে...

আলোপতি, এই যে আমার অভিব্যক্তি আজও

কথাজন্ম

যে কথারা    গিয়ে, সালিশে বসেছে, মাঠে
যে কথারা    এসে ভিড়ছে, নতুন ঘাটে

যে কথারা    কথাও নয়, কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে
যে কথারা    গোপনেষু, মৌন ফুটে ওঠে...

যে কথারা    নির্বিকার, শোন- কিছু বলে
যে কথারা    শরণার্থী, অন্য দেশে চলে

যে কথারা    নিদ্রাপ্রিয়, তারও জেগে থাকা
যে কথারা    গমক্ষেতে, কাকগুলো আঁকা...

যে কথারা    পাড়াময়... কবে কবে মৃত
যে কথারা    তর্কাতীত ও অপরাজিত

যে কথারা    আঞ্চলিক, কেউ কেউ জানি
যে কথারা    দুর্বিষহ... আপামর গ্লানি

যে কথারা    অবিন্যস্ত, রেলিঙে টাঙানো
যে কথারা    দুর্বোধ্য, তুমি শুধু জানো

যে কথারা    মরুময়, জলগন্ধ খোঁজে
যে কথারা    অনূদিত লা-নোজে লা-নোজে

যে কথারা    গৃহত্যাগী, ফিরেও ফেরে না
যে কথারা    ছোটবড় সকলের চেনা-

যে কথারা    আজকাল দারুণ চমক
যে কথারা    ফিরে এলে বলি- ‘ফের হোক’

যে কথারা    অবশেষে, আর্তময়-ধ্বনি
যে কথাকে    কখনওই, তুমিও শোননি-

যে কথার    চেয়ে তবে, কথাহীন ভালো?
আমাদের    কথাজন্ম, কোথায় হারাল...

দিবানিশি

মাসউদ-উল-আলম-কে
এক একটি দিনের সঙ্গে গেঁথে রাখি পরবর্তী দিন!

রাতে, বয়নমন্ত্রের নামে
নিদ্রাহীনতায়ও উৎসাহ রয়েছে এমন যারা-বা;
একসঙ্গে গাঁট্টি বেঁধে কুটিরশিল্পের ঐতিহ্য নিয়ে
            বলাবলি করি...

এদিকে, ধূসরসম্প্রদায় তো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে
এই যে রাতের ধর্ম, সেটি রূপান্তরিত!
        একদা নকশিকাঁথা ছিল...

ভাবো, এই দিন কত অর্থহীন!

ভাড়াবাড়ি থেকে লেখা

উজ্জ্বল, রনি, রিপন... এরা সেই তিনজন শালিক
এত এত সাময়িকী! এত এত শুক্রবার আসে?
এ-সময় আমাদের
        ভাড়াটে কবিতাগুলি
    জন্ম নেয়
        কিছুটা গুটিয়ে থাকা
            শাদা শাদা ঘাসে!

আমরা ভাড়াই থাকি
        ভাড়া থাকে আমাদের
            বিছানা-বালিশ-ঘুম,
গলিময় ভাড়া থাকে সন্দেহমূলক রুম...

ফলে, এত সাময়িকী, শুক্রবার
    শাদা ঘাসে চিত্রিত বর্ণনা,
ভাড়াটে পাঠক আছে কিছু হাতে গোনা।

রে বাতাস... তুই কেন অহেতুক ওষ্ঠ পাঠাস?
এ-সময় আমাদের
ঋতুময় মেঘগুলি
    ভ্রম করে
        তাকেই তো বলেছি যে-
            দু’একটা কল্পনার হাঁস...
দু’একটা শুশ্রূষার ছবি! আর, কদিন লিখিনি বলেই
এত এত ধুলোঝুলি
        ভাষা-বাক্য-বাড়িঅলা
            দূরে যা দাঁড়িয়ে দ্যাখে
    ভাড়ায় গুটিয়ে যাওয়া
        নব্বইয়ের কবি-
    তার, ভাড়াটে জীবন!

কলাকেন্দ্র সেমিনার
        যখন
              ‘মেট্রোপলিটন...’
কিন্তু ঠিক ভাড়াটে কি মধ্যবিত্ত মন?

পরকীয়া

মেঘ বহুগামী! এক মেঘ যায়
        অন্য মেঘের ডাকে,
কিছু মেঘ তো বর্ষার বাইরেও থাকে!

কিছু মেঘ থাকে আমাদের কবিতায়

শেষমেশ ছেলেটি বলল:
    নির্বিকারে পরকীয়া করে
        মেঘ! (হয়ত সংগত)

একস্থান থেকে অন্যস্থানে
        কী অবাধেই না যেতে পারছে
আমরা দেখেও দেখছি না...

আর মেঘও তো জানে;
    সুশীল সমাজের ধারণা
        গোপনে গোপনে
            প্রতিষ্ঠিত
                বহু আগেই...

তাই যখন সেমিনার হয়
মেঘ মনে মনে হাসে
    একস্থানের মেঘ অন্যস্থানে
        কী অবাধে
            ঢুকে যেতে ভালোবাসে...

পুরনো দিনের গান

পুরনো দিনের গান- কতোটা পুরনো?
যতদূর শোনা যায়
    বহুবাড়ি ঘুরে ঘুরে
       পথিমধ্যে মরতে মরতে
        আবার সে উপাধিত-
           ঘনিষ্ঠ ঘরানায়!
কেননা, খাটের ওপরে বসে বেমালুম শ্রোতা!

আমরা জানি,
    বহু তথ্য বিস্মৃতিরা খেয়েছে আগেই
        বহু সূত্র বিলুপ্তির তীরে গিয়ে
            ডুবতে বসেছে
এদিকে বাবুইছেলেরা আর
    বাবুইমেয়েরা মিলে
আমাদের গৃহজ্ঞান তুচ্ছ করে, বলছে- যারাই
শ্রবণে ডুবেছে পুরনো গানের;
        পুরনো খাটের ঘরে
যেই না বসেছে, খাটের কাঠও গাছ হয়ে যায়
        যে গাছ বাতাসে
             কাঁপতে কাঁপতে নড়ে

ঘরানা-ঘনিষ্ঠ তাই, এই সন্ধ্যায়
    উঠতি গায়িকা এক
         যেন কারো অগোচরে
        গাইছে-
    আষাঢ়-শ্রাবণ...
পুরনো দিনের গান, উনিশে অঝোর
        জলে ভেসে আজ
            হবে কিছু নারায়ণ?
বাবুইছেলেরা বাবুইমেয়েরা ভালো আছ?
    ভালো আছ ভ্যালেন্টাইন
        হাওয়াই-চপ্পল মন?

খণ্ড শ্লোক

মা গো, আমি মর্মাহত! এই নদীজন্ম দ্ব্যর্থ যদি
                তীরে!
এপারে আমার গৃহ, গান! ওপারেও পড়ে থাকি
                ছিঁড়ে...

*    *    *    *    *

তবে, সেতুটা ধারণামাত্র! ভাবো
        জলও যদি বিভাজন জানে,
দাম্পত্যের রইল কি মানে?

ওপারের চরে মৃত তারা মাছ;
    আমি কিছু
        গৃহ, গান পাব?

পপ পোয়েট্রি

আমার        মুঠোয় শুধু গান
আমি        ছড়িয়ে দিতে পারি!
    মাথার উপর তুমুল আকাশ;
    আকাশটা সরকারি...

আমার        মুঠোয় শুধু ধান
আমি        ছড়িয়ে দিতে পারি!
    ঝরাপাতায় পত্র লিখে
    বনে ব্র‏হ্মচারী

আমার        মুঠোয় শুধু প্রাণ
আমি        ছড়িয়ে দিতে পারি!
    যা জিতেছি দীর্ঘজীবন
    একমুহূর্তে হারি...

আমার        মুঠোয় শুধু বাণ
আমি        ছড়িয়ে দিতে পারি!
    একমুঠো মেঘ ধরতে যাবো?
    মেঘ নয় ওটা, শাড়ি...

    মাথার উপর তুমুল আকাশ
    আকাশটা সরকারি

ধুলো    আমি ছড়িয়ে যেতে পারি
ধুলো    আমি জড়িয়ে যেতে পারি...

ছুরিকাবেলার গান

সামান্য এক বীজপত্র, মাটিতে পুঁতে দেবার পর- এই চারাগাছ, একদিন গাছ হয়ে ওঠে! আজ স্পষ্ট মনে পড়ছে, বহুপ্রকারের পাখির সঙ্গেই সন্ত্রাস ঘটানো হয়েছে। ফলে তারা গৃহহীন হলো... যখন, গাছকে হত্যার পর, সেই গাছ মৃতান্তরে কাট হয়ে যায়। সেই কাঠই বহুভাবে পুড়ে পুড়ে কয়লা... কয়লারও খেসারত আছে; তাকে ভস্ম করার স্বার্থে দ্বিতীয়বার পোড়ানো হয়। দেখতে পাই, বিলুপ্তপ্রায় কামারশালার আগুনে গলানো হয়ে থাকে লৌহজ-ধাতব; গলতে গলতে, একচিলতে ধাতবের হাসি হয়ে আমাদের সহিংস ছরিজন্ম হয়, বিশেষ্যে ছুরিকা! ইতিমধ্যে অজস্র ভদ্রতা ছিনতাই, পথেঘাটে অসংখ্য মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের নাম জড়িয়ে গেলে, অহেতুক মনে পড়ে সেই বীজপত্র... সেই চারাগাছ... কামারশালার আগুন! আগুনে ধাতব-জন্ম! আহা, ডাহা ছুরিকাবেলায়, আমি বলে যাই- সঠিক ব্যবহার হল না বলে, আমরা এত রক্ত ভালোবেসে,  লোমহর্ষক খবর হয়ে উঠি

পড়ন্ত রাতের কবিতা

অবশ্যই তীরে যদি গ্রাম থাকে... দুটি দুটি তীর
অবশ্যই মাঠে যদি গান থাকে, গায়ক মেলে না!
আর যত ছবিমালা, ছবিয়াল আমাকে চেনে না?
বাক্য যদি লেখা হয়, সেই বাক্য লালন ফকির!

আর যত গৃহ তাতে, অলিখিত জানালা-বাউল
আর যত ধুলো তাতে- প্রতিদিন হেঁটে যায় লেখা;
অবশ্যই ভিন্ন মানে, ফুলবনে যত কাশফুল!
আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের অগ্নিমন্ত্র শেখা!

অবশ্যই আমি সেই অভিশপ্ত পোড়োবাড়ি চিনি।
আর যত ছায়াকণ্ঠ, রাতে রাতে আমাকে ডেকেছে!
কিন্তু আমি যেতে যেতে... মনে রেখো আমিও পারিনি,
না-পারাই সারামুখে নিরুপায় বিষাদ মেখেছে...

ফলে, ছাপাখানা দেখে নেচে উঠি, জন্মাবার লোভে
অবশ্যই এই বাক্য জাগে, যখন তুমিও ঘুমোবে

মম বন্ধু তরে

জাফর আহমদ রাশেদ প্রতিমেষু
পাত্রে জল রেখে তাতে দেখতে পাই মুখ
পাত্রটি উনুনে দাও, মুখের
        ছায়াটি পড়ুক

বহুপাত্রে বিভাজিত
        যত যত যত,
প্রতিকৃতি দেখেছি যা
এক-একদিনের ক্ষত...

এক-একদিনের যৌবনিকা এক-একদিকে যায়
পাত্রে জল রেখে তাতে
        পষ্ট দেখতে পাই?

এই পাত্রের পাড়াপড়শি
    ভাঙা আরশি আলো,
উনুনে মুখ পুড়ছে, তাতে
হঠাৎ যে চমকালো!-

তার মুখে ফুল, ধূপচন্দন... এস্রাজে ভৈরবি
ধীরক্রমে রুগণকুসুম
        পাপবিদ্ধ কবি?

মম, পাত্রে জল, জলাঙ্গিতে
        একটুখানি পরেই
    অগ্নিভষ্ম অঙ্গারীয়
            কবিতাধীন ঘরে-
বুঁদ হওয়া তার লাল চক্ষু লাল যৌবনিকা!

উড়ে যাচ্ছে ঝরাপাতা, বনে বনে
        সহস্র পাঠিকা...

এইম ইন লাইফ

সমুদ্রের সব কীর্তি, তুমি তো জান না!

তাহলে কি জান-
বহু নীল শার্ট থেকে রেলিঙে টাঙানো?
যে কোনও সমুদ্রের তীরে!
    তুমি সূর্যাস্তের গল্প দেখে, ফের
        এসো কিন্তু ফিরে

অতন্দ্রের সব অর্থী- তুমি তো জান না...

কিছুটা কি জান-
যত ঢেউ জন্ম নিয়ে, ঢেউয়েই হারানো
    আমাদের কথামৃত ধ্বনি;
জল-স্বরে সব গান
    তুমিও শোননি!

কোনদিকে চলে গেছে কোন পন্থ, প্রেম!
কোন বনে ঝরে গেছে কুসুমিত ঘুম, আহা
            পেশা প্রবলেম?

পুত্র যদি পিতা ধীরে, কন্যা যথাযথ
তুমিও তোমার মতো!
        ও হ্যাঁ-
শোন আমি বালুচর হবো
    যে কোনও সমুদ্রের তীরে!

উধাও খসড়া

কিছুমাত্র মাঠ পেলে
স্বৈরপ্রাণে সেখানেই
    বাক্য রেখে দিই...

বিস্তর উদ্বৃতি থেকে আজও উদ্ভুত
        হয় এমন এমন গল্প:
অন্তত মাঠেই অন্তত মাঠেরই রয়েছে
দূরদেশি হাওয়া, হু হু সম্ভাবনা

অথবা যাদের হারিয়েছি বিভিন্ন বিকেলে
তারা কিছু পঙক্তি ছাড়া কিছু নয়
        আজ;
              উড়ে আসে পালকের ভাষা
            আমি তাকে সমীপেষু করি...

আর ইচ্ছামতো বাক্য রেখে আসি
                মাঠে
যেখানে প্রপিতার প্রজ্ঞাপুঞ্জ,
ঢিলিমিলি রেখা হয়ে ফুটিফাটা
        ফুটিতেছে
আর উধাও প্রাণের খসড়া
            অভ্রে উড়িতেছে...

ধুলোস্তোত্র

ক. কি করে যে লেখা হলো, ধুলো... তার জ্ঞান?
ধুলো জ্ঞানবান;
তা না হলে ব্যস্ত-বদলের এই সূত্র
        কি করে সে জানে?
নিশ্চয় ধুলোকে কবি ধর্মগ্রন্থ মানে

খ. ধুলোর নিকুচি করি, ধুলো যত্রতত্র যাক উড়ে!
ভিতরে ভিতরে
আমারও তো সায় আছে, লাই পাচ্ছে ধুলো! ভবঘুরে...

গ. কেবল আমিই পারিনি!
মাঠে মাঠে আরও মাঠ...
    কেউ সেই মাঠে গিয়ে মাঠ হতে পারে।
ও হাওয়া, সন্ন্যাস দাও এ ভব ধুলোর সংসারে...

ঘ. ধুলো থেকে ধুলো থেকে ধুলো থেকে ধুলো
কার ঘরে চাল নেই আছে শুধু চুলো...
প্রসঙ্গত বলা যায়
যার ঘরে ধান নেই, আছে শুধু কুলো...

ঙ. কি করে যে লেখা হলো, ধুলো এর নাম?
ধুলো ঘনশ্যাম...
তা না হলে এত প্রেম? গোপনে, গোপনে সে আসে!
আমাদের ধুলোমন, ধুলো ভালোবাসে...

Monday, September 7, 2009

ধূসর কুটিরশিল্প

আসন্ন লুপ্তির আগে, আলো একবার
জ্বলে উঠেছিল! যাকে বলি অন্ধকার

তাও এল হাতের তালুতে, বিস্তারিত!
যদি হাত মুঠো করি, আমি তবে মৃত-

এক তারমাছ, জোছনায়... বালুচরে!
আসন্ন লুপ্তির আগে, এত আলো ঝরে?

অথবা এই যে নদী- মৃতবৎপ্রায়
আমি এর পাড়ে এসে থমকে দাঁড়াই
কেন? কেন আমি কবিময় মেঘ থেকে
বারবার জন্ম নিই, প্রপতন দেখেও?

যখন দেখেছি এক বউপাখি ডাকে
অবিরাম কোনও কুমারসভার পাশে!
দেখেছি দীপিত মন, দগ্ধ... দুর্বিপাকে,
মনও তবে মন্বন্তর, লুপ্তি ভালোবাসে?

মন লুপ্ত মেধা লুপ্ত, লুপ্ত শবাধার
লুপ্ত বহু সাম্রাজ্যের, গুপ্ত সমাচার...

আমি গুপ্তদের পাশে, আঁধিবর্ণকনা
তবে যা বেসেছি ভালো, তা তো বলব না...

বলব না ছিল বহু বাঞ্ছা-লুপ্ত বেলা
সেই প্রচ্ছন্ন দিনের পাশে, ক্ষতময়!
পাতাপাতা লিখে তবু ফের ছিঁড়ে ফেলা
যত প্রসিদ্ধ চেতনা... সংশয় শত

সংশয় একটি শব্দ, অর্থ বহুদূর
আমার নিভৃত নাম, সংশয় ঠাকুর

এদিকে কুটিরশিল্প- তাঁত, স্বপ্ন, আশা,
ধুধুশব্দ কবিতা বা ফেরার পিপাসা;
আসন্ন লুপ্তির আগে, জ্বলি একবার
তাই-ই লিখি, মোটকথা লিখি অন্ধকার...

লিখি কিছু ব্যক্তিগত, অবনত কথা
লিখি বাক্য জিষ্ণুপ্রিয়, শীর্ষে বিফলতা
কেননা ক্ষুদ্রজাতের, কবি বা যাহারা
তাদের বিশেষ লক্ষ, জলকে পাহারা
দেয়া বৈ কিছু নয়, নদীমাত্র জানে
যেহেতু জলের ধর্ম, মৃত... অভিধানে!

মৃত কি পাখিও নয়? মৃত... ছাপা হলে
মৃত যা লিখেছি খাতায়, লিপিকৌশলে।
মৃত যত উচ্চারণ, ছুঁড়ে দেয়া তীর
এরই ফাঁকে মৌন, সেও শব্দে চৌচির...

এরই মধ্যে বহুবাক্য, বহু দিকে দিকে
ছড়িয়ে গিয়েছে! ফলে, বসবাসও শিখে
নিয়ে, অন্যদেশে তারা অন্য সম্প্রদায়...
এতদিনে, রাতে, আমাকে ভুলেছে প্রায়...

আমিও ভুলেছি ধর্ম, একদিকে গিয়ে
রহস্যমন্ত্রীর মেয়ে, তাকে করি বিয়ে;
হেনকালে শুরু করি রহস্যসংসার!
তা-ও লিখি, মোটকথা লিখি অন্ধকার...

এত লেখা এত দিকে, কোথায় পালালো
আসন্ন লুপ্তির আগে, আমি কিছু আলো
হয়ে, দ্যাখো আজও নিজেকে ছড়াই...
ধূসর কুটিরশিল্প তো বিলুপ্তপ্রায়!

বৈধ কিনা!

অসামান্য এক নদীর ব্যবহার আছে; এরকম এক গল্পে
আজ ভোরেই আমি ঢুকে পড়েছি

অতএব এ যাত্রায় নৌকা ছাড়া কিছুই ভাবছি না...

বরঙ ভাবছি:
    নদীর ওপারে যে ধেই ধেই গ্রাম
ওই গ্রামে
    তিনবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েটিকে
        আমৌন প্রশ্রয় দিয়ে
            যদি বলি,
            শোন:
সেই নদী-ব্যবহৃত গল্পের লেখক কিন্তু কৃতদার?

স্বীকারোক্তি

হাইড্রান্ট খুলে নিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল:
তাতে আমাদের কী?- এদেশে আমরা, বালকদল,
নেচে নেচে যথার্থ হতে পারিনি এখনও-
এরই মধ্যে জল, যুবতী যে হলো; রয়েছে কারণও...

যেহেতু, ব্যাখ্যার ধর্ম ভেঙে, ভেঙে যায় ভোরগুলি
যে জন্যে বৃষ্টির পরই উদগত জুঁইফুল তুলি...
অন্তত ধ্যানের সূত্রে, এই যে ধানীবাক্য আজও লিখি
এরই মধ্যে দাশবাবু- দিগ্ধ, ঢুকে পড়লেন ঠিকই?

এরই মধ্যে অ্যাস্ট্রোলোবানের গন্ধ বারকয় ঘুরে
গিয়ে বসেছে বনান্তে, তার শিষ্য হাওয়া, ভূতুড়ে...
ফলে অম্লান গানের পে মাঠময় ধান হতে গিয়ে
আজও মাঠে রয়ে গেছি... বালকেরা, বিভস্ম উড়িয়ে

যেহেতু জলের শব্দে যত মেঘ, বর্ষা, ঋতুমতী!
বিন্দু বিন্দু স্মৃতি মেখে আমাদের এই অবনতি

কেননা তৃষ্ণার্ত থাকি, কুষ্ঠজলে, যথা যুবতীতে...

লেখালেখি বিষয়ক

রচিত বালুর চর
    তার অনুকূলে
        জোছনায়
মিথ্যে রাত্রির ডানা
    উড্ডিন শেখালে যদি
নির্বিকল্প-পাখি বলে ডাক দিও মোরে!

আমি রহস্যমন্ত্রীর পুত্র
    নিদ্রা বিভঙ্গের কালে
        কিছু মুদ্রা ফেলে যাব
            তোমার আঁচলে...

বালুচরে, জোছনায় মিথ্যে ডানা ও পাখি
আরও যা যা চিত্রকল্পভাষা
    সবই লেখা থাকে
        অলিখিত!
কেবল আমিই পড়ি-
    পড়তে তো পারি বনমর্মে...

বহু দণ্ড কাঁধে নিয়ে শেষে
সেই লেখা
    মনে রেখে
আবার কাগজে লিখি
    আর কাগজে ছাপাই;
ফলে, মেনে নিই কবিত্বের অনুপ্রবেশ...
ফলে, এই ঘরবাড়ি ভেসে গিয়ে
        জেগে ওঠে নদীময়
            নিশিলক্ষা তীরে...

তীরস্থ চরের বালু
    জোছনায়
        রচিত মিথ্যে রাত্রির ডানা ও ঘুম
কখনও পড়েছি! কিন্তু আজ লিখিবার মৌসুম...
কেননা আমারই শরীর থেকে ফুটিছে প্রসূণ

বন্ধুর মেয়ে, কাঠের ঘোড়া

আমার বন্ধুর মেয়ে, আমাকে ডাকল ‘বাবা’
                কেন?
আমার কাঠের ঘোড়া ফিরে এলো কান্ত হয়ে
                কেন?

বন্ধুর মেয়েকে কিন্তু চকলেট কিনে দেইনি!
কিংবা আমার ঘোড়াকেও আমি বলিনি-
            যাও, প্রান্তর কাঁপিয়ে এসো...

আমার চোখের নিচে এত অন্ধকার বন?
সমস্ত আলোই আজ হয়েছে হরণ-
            কিন্তু কেন?

আমার দূরের গল্প, ধুধু হয়ে আসে, কেন?
এখন নদীও কিনা-চড়া ভালোবাসে? কিন্তু কেন?

জাগ্রত প্রশ্নের পর, এ অঞ্চলে থাকা যায় বলো?
যা কিছু গোপন, নিয়ে মন, ও মন
        অন্য দেশে চলো

কেন না বন্ধুর মেয়ে, তার বাবা আমি নই
            তাই না?
আমার কাঠের ঘোড়া, প্রকাশ্যত প্রান্তরে যায় না...

কুটিরশিল্পের ভাষা

তোমাকে জানাতে হবে আজ... কুটিরশিল্পের ভাষা

কেননা, শেষপর্যন্ত যে নদীটি মরে যাচ্ছে-
এর জন্যে জলকেই বলা যায়:
        ‘কারণ দর্শাও’
সঙ্গে এও বুঝতে হবে, জলেরই সবচেয়ে চরিত্র খারাপ;
যেহেতু সে নদী হতে গিয়ে, কতদিন
    দিঘি-হ্রদ-হাওড়ের,
আমাদের চেনা ওই কাঠামোতে
তাকে ঠিক
    শুতে হয়েছিলো...

তাহলে? জল আজ অন্য গাঁয়ে
        গিয়েছে বলেই
মোটামুটি শুয়েছে বলেই
দেখতে দেখতে নদীটি মরছে...
    কবিতা লিখছি আমি!

জীর্ণপাতা ঝরার বেলায়
পাতা থেকে ঝরেপড়া
    একফোঁটা অলৌকিক জল
আমার বোনের মতো- বিনত মাটিতে পড়তেই
            সৃষ্টি হয়
        এইসব নদী-হ্রদ
            হারা-নৌকা
                ভাটিয়ালি
                    ভোলামন
                        মাঠের জার্নাল...
অবশ্য বিলুপ্ত প্রায়-
    আজ এ কুটিরশিল্প!
আর আমি ক্ষুদ্রজাত... কেননা
কুটির শিল্পের ভাষাকেই
    প্ররোচনা আর প্ররচনা করি:
ফলে, আমি ওই নদীটিকে জন্মাতে দেখেছি! যেদিন
আমার মা ও বাবা
        মুগ্ধ
        কন্যা সংহিতা করেছিলেন!

তোমাকে দেখাতে হবে, আরও... কুটিরশিল্পের ডিঙা!

জান কি, শেষপর্যন্ত নদীটি আমার বাক্য
    ব্যবহারে অবসন্ন
        ক্ষয়িত কলের গান...
            আজ পরিত্রাণ পেতে চায়?

সঙ্গে এও জানাতে হবে যে, জল আসে আরও কোনও
                জল থেকে বলে
চড়ায় নদীকে রেখে সেই জলই চলে যায়:
        ‘মরুতে তুমিই ত্রাণ’
যেহেতু ক্ষুদ্রজাতের, কুটিরশিল্পের কথা
        তোমাকে জানাতে চাই!

যেহেতু আমিও
    মৃতবৎপ্রাণ... বালুময়
        কবিতা লিখতে লিখতে
কত যে মাইল মাইল
ধুধুকে বলেছি
    ‘গার্ল!’
    ও গার্ল
সি ইউ এগেইন, গুডবাই...

Sunday, September 6, 2009

পদ্যপ কবিতা

উচ্চ শিক্ষায় অত্র যাত্রা
মাঠের দিকে উধাও মাত্রা,
তুলনামূলক ভালো ছাত্র
মাঠ-গবেষক সবে মাত্র...

গবেষণা তো ধুলোর বিষয়
বেঁচে থাকতে কবে শেষ হয়?
কবে শেষ হয় ধুলো রচনা-
কবির নামে গল্প শোনা:

কবিরা খুব মাঠের দিকে
সংসারী হন, স্বপ্ন লিখেই

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

এত নদী!- ছিল তার তীরে তীরে দুটি দুটি গ্রাম

এখন শহরে নাকি! শহরই আমাদের সীমানায়!!
ফলে, কিছু দ্বিধা ভেঙে
    আমরা যে গ্রামে এসেছি,
    শুনতে পাই-
এপাশে যে নদী ছিল,
        কিছুদিন আগেই
যেহেতু শুকিয়ে গেছে
        আমাদের খুব তেষ্টা পাই...

শুধু কিছু জলাংশের স্মৃতিচি‎হ্ন নিয়ে
    এক নদী
তার নামকরণের সন্ধানে বেরিয়েছি-
        কিভাবে চরের বালি
            চাষাবাদে
                চরিত্র বদল করে?

গবেষণা, তুমি নিজে বলো-
বিলুপ্ত ঢেউয়ের ফণা
        কোনও তীরে
            প্রামাণ্য কী থাকে?
বাস্তবতা নদী নয়, জীবনের বাঁকে

তাকে শিল্পটিল্প যাই বলো, ক্রমশ কি ধূসর নয়?